Thursday, May 4, 2017

আমরা শুধু সমালোচনাই করতে জানি, কিন্তু পথ দেখানোর কেউ নেই!

জাতি হিসাবে আমরা অনেক অনেক অনেক ঈর্ষাপরায়ন হয়ে যাচ্ছি।

ছেলেবেলায় পড়েছিলাম ‘যে দেশে গুণের কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মায় না’
আসলেই... খুব বেশীদূর তাকাতে হবে না, পাশের দেশ ভারতের দিকে দেখুন। তারা লতা মুঙ্গেশকর, আশা ভোসলে’কে কতটা সন্মান করে। আর আমাদের রুনা লায়লাকে তাঁর যোগ্য সন্মান রাষ্ট্র কেনো, সাধারণ মানুষও করে না, সাবিনা ইয়াসমিনকে তো তাঁর ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে হয়েছিলো।

কিছুদিন আগে এক নব্য শিল্পীও তাঁর সাথে ঈদের অনুষ্ঠানে কোরাসে কন্ঠ না দেবার জন্য কিঞ্চিৎ বেয়াদবীও করেছিলো, যদিও সেই গায়ক যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচার পেয়েছিলেন তার একজন বিচারক ছিলেন আমাদের সাবিনা ইয়াসমিন।
বুঝেন তাহলে অবস্থা।

এই যদি হয় সেলিব্রেটিদের সন্মান করার/পাবার দশা, তাহলে আমাদের সাধারণ মানুষদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।

এবার আসি আসল কথায়, বর্তমান প্রজন্মের কাছে আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হয় ‘নিজে পচে বা অন্যকে পচিয়েই কি এখন আলোচনায় আসতে হয়?’ ‘রূচিশীল/মার্জিত সংস্কৃতি চর্চা, একে অপরের প্রতি সন্মানবোধ বলে কি কিছুই আমরা বুঝি না?’

হিরো আলম নামে এক স্বল্প শিক্ষিত/ স্বাক্ষর এক যুবকের নিজের তৈরী ভিডিও আমরা শেয়ারে শেয়ারে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে দিচ্ছি, তাকে পচাচ্ছি। অথচ কেউ তাকে এই ভাঁড়ামি থেকে বের হয়ে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার পথ দেখাচ্ছি না।
কেউ কেউ তাঁর এই ভাঁড়ামো দেখতে ফেসবুকে লাইক দিয়ে তাকে জনপ্রিয় ব্যাক্তিদের কাতারে ফেলে দিচ্ছি।
বিশ্বমিডিয়াও বুঝে/না বুঝে তাকেই বাংলাদেশের সংস্কৃতির মাপকাঠিতে পরিনত করেছে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকি খুব উঁচু হয়েছে?

আমাদের ফিল্মে কি সালমান শাহ, রিয়াজ, শাকিব, ফেরদৌস, চঞ্চল, শুভ সহ আরো শক্তিমান নায়ক ছিলো না?

নায়করাজ রাজ্জাকের জীবনী নিয়েই তো যেকোন মিডিয়া বছরের পর বছর পার করতে পারে। আমাদের কি বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দেবার মতো হুমায়ূন ফরীদি, এটি এম শামসুজ্জামান, মোশাররফ করিমের মতে দূর্দান্ত অভিনেতা নেই?

আমরা শুধুই সমালোচনা করতেই জানি, কেউ ভুল পথে যাওয়া মানুষটাকে পথ দেখিয়ে আসল মিডিয়া বা মাধ্যমের কাজ করিনা।


ইদানিং আমাদের পচানিতে যোগ হয়েছে কাসেম বিন আবুবকর নামের জনৈক লেখক।
তাকে গ্রাম গঞ্জের স্বল্প শিক্ষিত /শিক্ষিত পাঠক সমাজ বেশী চিনেন। শহুরে মূল ধারার পাঠকসমাজের আড়ালেই ছিলেন তিনি।
মজার ব্যাপার তাঁর লেখা বই/উপন্যাসগুলো দামেও কম, কাটতিও বেশী।
কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি কাসেম বিন আবুবাকারকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হন তিনি।
আর আমরা, হঠাৎ মেঘ না চাইতে তুফানের মত পেয়ে যাই আমাদের পরবর্তী পচানীর টার্গেট।
আমরা যারা অধিকাংশ তাকে পচাচ্ছি, আমি নিশ্চিত তাদের ৯০% মানুষই তাঁর লেখা পড়িনি। আমরা পচাচ্ছি এর-তার থেকে শুনে শুনে।
আর এই পচানিতে ইন্ধন দিচ্ছেন আমাদের সমাজের বর্তমানে যারা লিখালিখির চেষ্টা করেও আলোচনায় আসতে পারছেন না, কিন্তু সেখানে আন্তর্জাতিক মিডিয়া এই অখ্যাত লেখককে নিয়ে লিখে যাচ্ছে। তাঁর লেখা অনুবাদ করতেও চাইছে।

আমাদের ঈর্ষাকাতর মন তার এই প্রচারে আসা মেনে নিতে পারছে না, শহুরে আমরা ভাবছি আমরা এত যোগ্য! হবার পরেও এএফপি এই বৃদ্ধের লেখাকে প্রশংসিত করছে কেনো?
একজন অখ্যাত বৃদ্ধের কাছে পরাজয় বর্তমান তরুন লেখকেরা মেনে নিতেই পারছেন না।

ঈর্ষা, ঈর্ষা, সবই আমাদের ঈর্ষাকাতর মনের হিসেব।

সত্যি কথা বলতে আমি কাসেম সাহেবের প্রচারণার জন্য কথাগুলো লিখছি না। প্রখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদ পরবর্তী কারো লেখাই আমাকে বিশেষ টানেনা। নবীন লেখকরা লিখছেন, আমরা পড়ছি, কিন্তু লেখায় সেই জাদুর আবেশ কারো লেখায় পাই না। কাসেম সাহেবের লেখায় তো কোন ভাবেই নয়।

কিন্তু আমার একটি ব্যাখ্যা দরকার সন্মানের জায়গাটা থেকে।

একজন লেখকের মূল সন্তুষ্টি তাঁর লেখার গভীরতায় পাঠককে নিবিষ্ট করে দেয়া, সেই কাজটা কাসেম সাহেব করে যাচ্ছেন গ্রাম-গঞ্জের অসংখ্য পাঠক তৈরীর মাধ্যমে।
এই ডিজিটাল ফেসবুকের সময়েও কিছু মানুষ তাঁর লেখা (ফেসবুক ষ্ট্যাটাস নয়) বই পড়ছে। তাঁর বই ছাপিয়ে কিছু প্রেস টিকে আছে, কিছু হকারের পেটে ভাত পড়ছে, কিছু মানুষ তাঁর লেখা পড়ে প্রেমে পড়ছে, ভালোবাসছে এটাই বা কম কি!

হতে পারে তাঁর লেখা শিক্ষিত/বেশী শিক্ষিত সমাজকে টানতে পারেনা তাই বলে দেশের যে সমাজে তাঁর লেখা আবেদন রাখে তাদেরকে অসন্মান কেন করবো?

বিশ্বমিডিয়া তাকে নিয়ে মেতেছে মাতুক, আমরা কি পারিনা বিশ্বমিডিয়াকে দেখাতে আমাদের হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ূন আজাদ, জাফর ইকবাল, শামসুর রাহমান, রকিব হাসান, আনিসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, ইমদাদুল হক মিলন, রাবেয়া খাতুন, হেলাল হাফিজ সহ আরো অনেক অনেক রত্ন আছে।
আমরা কি তাদের বলতে পারিনা এসো, তোমরা দেখে যাও তোমরা যেই কাসেম সাহেবের লেখাকে সোনা বলে আঁকড়ে ধরতে চাইছো, আমাদের সাহিত্যে তাঁর থেকেও বড় বড় অসংখ্য কোহিনূর মণিমুক্তা পড়ে রয়েছে।
এতে করে কাসেম সাহেবকেও সন্মান দেয়া হতো, আমাদের স্বনামধন্য লেখকদেরও সন্মান দিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় দেখানো হতো। তাতে নবীন লেখকেরাও আস্থার একটা জায়গা খুজে পেতেন সামনে এগিয়ে যেতে।


কিন্তু আমাদের মিডিয়া সেটা করবে না বা করার যোগ্যতাও নেই।


আমরা শুধু জানি সমালোচনা করতে, কিন্তু পথ দেখানোর কেউ নেই!
কেউ বা যদি পথ দেখানোর চেষ্টা করে, তাকেও সমালোচনার পাত্র বানিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
সত্যই ‘যে দেশে গুণের কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মায় না’


লেখাঃ তৌফিক মিথুন
»» read more

Saturday, January 21, 2017

"অজ্ঞাতনামা - The Unnamed

অসাধারণ একটা সিনেমা দেখলাম!
বাংলা সিনেমা।
জনপ্রিয় অভিনেতা, লেখক ও নির্মাতা তৌকির আহমেদ নির্মিত "অজ্ঞাতনামা - The Unnamed"
অসম্ভব হৃদয়স্পর্শী ও গুরুপ্তপূর্ন একটা বিষয়ের প্রেক্ষাপটে সিনেমাটি নির্মিত। আদম পাচারকারী চক্রের নানা প্রলোভনে ফেঁসে সহজ সরল বাঙ্গালী তরুন বা যুবকটি এক বুক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশের মাটিতে পাড়িহয়তো দেয় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নিজ পরিচয় গোপন করেই বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়।
নিজ পরিচয় লুকাতে গিয়ে এক একজন হয়ে উঠে অজ্ঞাতনামা।
ছবির গুরু গম্ভীর করুন সাবজেক্টকে নির্মাতা ভিন্ন স্বাদের একটা গল্পের মাধ্যমে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

ছবির চিত্রনাট্য অসম্ভব রকম গোছানো এবং যথেষ্ট গতিময়। বোর হওয়ার এতোটুকু সূযোগ নেই। আর সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে প্রতিটা চরিত্র পরিস্থিতির সাথে খুব সুন্দর ভাবে মিশে গেছে। এতোগুলো চরিত্রকে এমন চমৎকার ভাবে গল্পে মিশিয়ে দেয়া বাংলা চলচ্চিত্রে খুব একটা দেখা মেলে না। চিত্রনাট্যের দিক থেকে ছবিটি নিঃসন্দেহে বছরের সেরা চিত্রনাট্যে ছবি।

ছবিটিতে জাঁদরেল সব অভিনেতাদের পাওয়া গেছে। 
ফজলুর রহমান বাবু  প্রতিনিয়ত অভিনয়ের এক এক নতুন স্ট্যান্ডার্ড দাড় করিয়ে যাচ্ছেন। এ ছবিতে তার অভিনয় নিঃসন্দেহে আমার দেখা সেরা অভিনয় গুলোর একটি। পুত্রশোকে হতবিহবল পিতার চরিত্রে বাবুর শোকে পাথর চোখের স্থির দৃষ্টি এক কথায় অনবদ্য। তার সরল মুখের এক্সপ্রেশনগুলো রীতিমত বিস্ময়কর। বাবু ভাই শুধুমাত্র এ ছবির জন্যই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুষ্কারের দাবী রাখেন।
শহীদুজ্জামান সেলিম  দালাল চরিত্রে দারুন দেখিয়েছেন। মোশাররফ করীমের কমেডিগুলোও দেখার মত ছিলো । সেলিম-করিম কেমিস্ট্রি এককথায় অদ্ভুত উপভোগ্য ছিলো!
শতাব্দী ওয়াদুদ  পুলিশ চরিত্রে আমার দেখা সেরা অভিনেতা। সমসাময়িক পুলিশ চরিত্রে তার বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। বিদেশে যেতে মরিয়া বিধবা চরিত্রে (নিপুন) নিজেকে উপস্থাপণ করেছেন দারুণ। শুধুমাত্র অভিনয়ের কারনেও এ ছবি প্রশংসা দাবী করে।

সিনেমাটোগ্রাফী ছিলো সুন্দর এবং মানানসই। বাংলাদেশের প্রকৃতি ছবিতে স্নিগ্ধ, সরল হয়েই ধরা দিয়েছে। অসাধারণ লোকেশান সিলেকশান, রাতের ঝুম বৃষ্টিতে নদীতে নৌকা; এ যেন এক অন্য রকম সৌন্দর্য্য। গ্রাম, কাঁচা বা পাকা রাস্তা, ফসলী জমি, নদী; বাংলার গ্রামের দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয়।
'অজ্ঞাতনামা' বিষয় বস্তুর দিক থেকে যেমন ব্যাতিক্রমধর্মী, তেমনি নির্মান ও অভিনয় গুনে চমৎকার একটি ছবি।

সঠিক পৃষ্ঠপোষোকতার অভাবে বাংলাদেশে এ ধরনের ছবি সবসময় নির্মিত হয়না।
আমার ধারণা আধুনিক বাণিজ্যিকীকরণের অভাবে এই ছবি হলে খুব বেশী সাড়া ফেলতে পারেনি।
'আয়নাবাজী'র মত বাণিজ্যিক প্লান গ্রহণ করলে এই ছবি শুধু ঝড় না ;সাইক্লোন সৃষ্টি করতো।
কথায় বলে প্রচারেই প্রসার।

আলতু ফালতু এনার্জী লাইটও কোম্পানীর প্রচারের কথা বলে মানুষকে গছিয়ে দেয়া যায় আর এটাতো দূর্দান্ত একটা সিনেমা।
আশা করবো তৌকির আহমেদের এমন চমৎকার সিনেমা নির্মান অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতের মার্কেটিং পলিসিতে একটু পরিবর্তন এনে দেশের সর্বত্র সিনেমা পৌছে দেয়ার ব্যাবস্থা করবেন যাতে মানুষ হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সুযোগ পায়।

তৌকির ভাই, মানসম্মত সিনেমা পেলে আমরা কিন্তু হলে গিয়েও সিনেমা দেখি। প্রমান আপনার সামনেই আছে।
অগ্রীম শুভ কামনা ।

লেখাঃ তৌফিক মিথুন
(কিছু তথ্য ও ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

»» read more

Sunday, January 24, 2016

ভাঙ্গতে হবে তালা

ভাঙ্গতে হবে তালা

মেজাজ যখন খারাপ থাকে
ভাল্লাগেনা কিছু,
বিরক্তিকর মাথা ব্যাথা
ছাড়তে চায়না পিছু।

তোমার বাড়ির চিপা চাপায়
মানুষ থাকে যত,
সবগুলোকেই দেখতে লাগে
বুদ্ধিজীবির মত।

এত বুদ্ধি খাটায় তারা
তোমার আমার বাঁধা
আমরা যেন মানুষই নই
মস্ত বড় গাধা।

যতই বলুক- যতই করুক
ভাঙ্গতে হবে তালা,
প্রেমের পথে থাকবে জেনো
অনেক অনেক জ্বালা।

তৌফিক মিথুন
(১২/০১/২০১৬)
»» read more

Sunday, January 3, 2016

নূর নবী আর ভিক্ষা করবে না, ওর নতুন পরিচয় হবে ছাত্র।



আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে নতুন বছরে পথশিশু নূর নবীর হাতে বই তুলে দিতে পারলাম
আপনাদের দোয়া আল্লাহর রহমতে আজ নূর নবীকে তার মায়ের উপস্থিতিতে বই, খাতা, শ্লেট, চক, পেন্সিল, ইরেজার, শার্পনার উপহার দিতে পারলাম নতুন বই খাতা হাতে পেয়ে ওর সেকী আনন্দ
ইনশাআল্লাহ সামনের আরো কঠিন পথেও ওর পাশে যেন দাঁড়াতে পারি সবাই সেই দোয়া করবেন

নূরনবীকে নিয়ে হয়তো এটাই আমার শেষ পোষ্ট, একটি ভালো কাজ করতে গেলে উৎসাহের পাশাপাশি অনেকের দৃষ্টিকটু সমালোচনাও সহ্য করতে হচ্ছে
কেউ বা আমার পোষ্টে লিখছেন, কেউ বা ইনবক্সে আর কেউ বা আমার পিছনে অন্যের কাছে বাজে কথা বলেছেন
একটা উদাহরণ দেই, আমার আর আমার স্ত্রী' রেস্টুরেন্টে খাওয়ার একটা ছবিতে এক পুরাতন বন্ধুর কমেন্ট ছিল 'আজ আবার কাকে রাস্তা থেকে উঠাই আনলি খানা খাওয়াতে?'
এটাতো একটা সামান্য উদাহরণ, ইনবক্সেতো আরো ভয়াবহ ব্যাপার যা লিখার মত না


আমার মতে মানুষ তখনই সমালোচনা করে...
. যখন কাজটা সে নিজে পারেনা
. যদি কাজটা অন্যকে করতে দিতে চায়না
. যদি জন্মগত ভাবেই অন্যকে ভালো কাজ করতে দিতে না চায়

ফেসবুকে লাইক/কমেন্টের আশায় একটা পথশিশুর লেখাপড়ার দায়িত্ব কেউ নেয় না
সবাইকে জানানোর উদ্দেশ্য থাকে, তাকে দেখে যেন আরো দশজন উৎসাহিত হয়
সমাজকে একা কেউ পরিবর্তন করতে পারেনা সবাই মিলেই করতে হয়
আফসোস আমরা বাঙালী একাই একশ হতে চাই, একশ বাঙালী এক হয়ে কাজ করতে পারি না

যদি আপনারা নূরনবী বিষয়ক পরবর্তী লেখা চান, তবেই লিখব, জানাবো
তবে একটা কথা নিশ্চিত করতে পারি, ইনশাআল্লাহ আমি বেঁচে থাকলে নূর নবী আর ভিক্ষা করবে না, ওর নতুন পরিচয় হবে ছাত্র
সবাই দোয়া করবেন নতুন বছরের শুভেচ্ছা

Towfik Mithun
(02/01/2016)

 
»» read more

পথশিশু নূর নবী

আপনারা যারা পথশিশু নূর নবীর জন্য সহানুভূতি দেখিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই
আপনারা জেনে খুশী হবেন, আমি নূর নবীর অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছি
ওদের জন্য কিছু শীতের জামা দিয়েছি
তার মা'কে বলেছি নূর নবী তার বোন আকলিমার পড়ালেখার খরচ আমি বহন করতে চাই যদি তারা রাজী থাকে তবে একটি শর্তও দিয়েছি আমি, সেটি হলো ওদের দিয়ে আর ভিক্ষা করানো যাবেনা
যদি কিছু করাতে হয় তবে ১০০ গোলাপ কিনে দিব ৩০০টাকা দিয়ে, ভাই-বোন স্কুলের পরে বিকালে ফুল বিক্রি করবে
প্রতি পিস ফুলে লাভ হবে / টাকা
১০০ফুলে ২০০/৩০০ টাকা লাভ
এভাবে মূল টাকা ঠিক রেখে প্রতিদিন অন্তত ভিক্ষা না করেও তারা কিছু টাকা উপার্জন করতে পারবে
তার মা আমাকে তাদের সিদ্ধান্ত পরে জানাতে চেয়েছেন
ইনশাআল্লাহ ওদের একটা নতুন পরিচয় হবে, ভিক্ষুক থেকে ওরা হবে ছাত্র
সবার দোয়া প্রার্থী

(অনেকেই নূরনবীর জন্য সাহায্যের হাত বাড়াতে চেয়ে আমার সাথে দেশে/দেশের বাইরে থেকে যোগাযোগ করেছেন, তাদের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতা জানাই, প্রয়োজনে আপনাদের সাথে যোগাযোগ করা হবে
তবে যারা দেশে আছেন, আপনাদের আশে-পাশেই এমন অসংখ্য পথশিশু আছে, আপনার এলাকার এমন একজন শিশুর দায়িত্ব আপনারা নিজেই নিতে পারেন
অতটা সামর্থ / সময় না থাকলে সপ্তাহে/মাসে/বছরে একবেলা ওদের পাশে বসিয়ে খাওয়ান, দেখবেন মনের পাপ অনেকটাই দূর হয়ে যাবে, ভালো লাগবে নিশ্চিত

তবুও যদি কেউ ব্যাস্ততার কারনে, সময় সুযোগের অভাবে অন্তত নূর নবী আকলিমার জন্য কিছু করতে চান তবে যোগাযোগ করতে পারেন

কারো একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না হলেও, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমাদের এই সম্মিলিত চেষ্টা যে মহাদেশ-মহাসাগর গড়বে না তাইবা কে জানে? আল্লাহ চাইলে সবকিছুই সম্ভব
মানুষতো মানুষেরই জন্য, এখনো অনেক মানুষ আছে, সবাই একসাথে অমানুষ হয়ে যায়নি)


Towfik Mithun
(27/12/2015)



»» read more

কখন মোবাইলটা বাজবে?


আজ অফিস থেকে ফেরার পথে দেখি রাস্তায় নূর নবী পেপার বিছিয়ে ঘুমিয়ে আছে
ছোট্ট শরীরের ভার বহন করার মত শক্তিও যেন নেই আমি অনেক ডাকাডাকি করে ঘুম থেকে তুললাম
ওর নাম ধরে ডাকা দেখে কৌতুহলী জনতার ভীর হতে লাগলো
প্রায় মিনিট তিনেক ডাকাডাকি করার পর ক্লান্ত নূর নবীর ঘুম ভাঙল
তাকে নিয়ে হোটেলে ঢুকলাম, আমাদের পেছন পেছন তার বোনও ঢুকল
আজ কিছু ছেলেদের হালিম খেতে দেখে আমাকে নূর নবী বলল রুটি  ঐটা দিয়া খাব
নূর নবীকে জিজ্ঞেস করি, স্কুলে যেতে মন চায়?
নূর নবী হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়
-কোন স্কুলে পড়তে চাও?
'আদমজী' তার উত্তর
আমি মনে মনে হাসি, খুশী লাগে ওর পড়ালেখার আগ্রহ দেখে
খাওয়া দাওয়া শেষে ওকে আর ওর বোনকে আমার মোবাইল নাম্বার লিখে দিলাম, বলেছি ওদের মাকে দিতে স্কুলে পড়তে চাইলে আমি ভর্তি করিয়ে দিব বই খাতাও কিনে দিব
আমার কথা শুনে নূর নবীর সে কি আনন্দ!

হয়তো ওকে এখন আদমজীতে ভর্তি করানোর সামর্থ আমার নেই, তবে ইচ্ছা আছে যদি ওর অভিভাবকের সাথে কথা বলা যায় তাহলে ওকে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে চাই
কয় টাকাই বা খরচ হয়!
ইনশাআল্লাহ একজন পথশিশুকে যদি শিক্ষার আলোতে এনে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়াতে পারি তবে জয়তো মনুষত্বেরই হবে
দোয়া করবেন আমার জন্য, আমাকে যেন থেমে যেতে না হয়, যেন হেরে না যাই
এখন অপেক্ষায় আছি নূর নবীর বাবা/মা এর ফোনের, কখন মোবাইলটা বাজবে?

Towfik Mithun
(24/12/2015)

 
»» read more

সেলফী


এখন পর্যন্ত আমার তোলা শ্রেষ্ঠ সেলফী এটি
জ্বী ঠিকই বলেছি, এযাবৎ তোলা সেলফী গুলোর মধ্যে এটিকেই আমি আলাদা করতে পারি নিশ্চিন্তে
আমার পাশে যাকে দেখছেন, এই শিশুটির নাম নূর নবী সে একজন পথশিশু বয়স খুব বেশি হলে বছর, কথাও গুছিয়ে বলতে পারেনা
আজ সন্ধায় অফিস থেকে ফেরার সময় শহীদ আনোয়ার কলেজের সামনে থেকে আমার পিছু নেয়, ছোট ছোট পায়ে হেঁটে কি আর আমার সাথে পারে!
তার দৌড়ে আসা দেখে আমি আমার হাঁটার গতি কমাই আমাকে বলে ক্ষিদা লাগছে কিছু খাওয়ান
আমি তাকে ৫টাকার একটা কয়েন দিলে সে বলে, 'পয়সা লাগব না, কিছু খামু'
-কি খাবা?
সে বলল,সবজি দিয়ে রুটি
নিতান্তই সাদামাটা খাবার কিন্তু যারা সৈনিক ক্লাব হতে কচুক্ষেত আসা যাওয়া করেন তারাই জানেন এটি ক্যান্টনমেন্ট এর সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় দোকানপাট মাঝ পথে নেই
আমি তাকে বললাম এইখানে তো দোকান নাই রে
সে দূরে হাত দেখিয়ে (কচুক্ষেত বাজার) বলল ঐযে ঐখানে একটা দোকান আছে রুটি বেঁচে কিন্তু আমারে ঢুকতে দেয়না
-ঐখানে খাইতে মন চায়?
নূর নবী মাথা নাড়ে
আমি তাকে নিয়ে ঐদিকে হাঁটা দিলাম
সে আমাকে তাকে দেয়া ৫টাকার কয়েনটা ফেরত দিয়ে বলে আমারেতো খাওয়াইতেই নিতাছেন, পয়সা দিয়া আর কি করুম?
আমি পয়সাটা না নিয়ে যখন পরে কিছু কিনে খাবার জন্য রেখে দিতে বললাম, সে অনেক অবাক আর খুশী হয়ে নিজের ছেঁড়া জামার পকেটে গুজে নিলো

দোকানের সামনে গিয়ে ভেতরে ঢুকতেও দ্বীধাবোধ করছে আমি সাহস দিয়ে ভেতরে নিয়ে চেয়ারে বসাতে চাইলেও ম্যানেজারের দিয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় তাকে তার চাহিদা মত রুটি-সবজী দেয়ার পরেও ছোট ছোট হাতে ঠিকমত খেতে না পারায় আমি যখন খাইয়ে দিচ্ছিলাম, আশেপাশের সব লোকজন মনে হলো আমাদের দেখে সার্কাসের মজা নিচ্ছিল এই সব লোকেরা নিজেরা কিছু পারেনা, অন্যদের নিয়ে খালি বাজে মন্তব্য করতে পারে আমাকে নিয়েও অনেক বাজে মন্তব্য করছিল তারা
যাই হোক, খাওয়া শেষে পাশের টেবিলে একজনকে চা খেতে দেখে নূর নবীর অপলক মায়াভরা চোঁখ ঐদিকে তাকিয়ে থাকে আমি ওর জন্য চা অর্ডার করাতে তার যে কি খুশি!
তৃপ্তি সহকারে ক্ষুধার্ত কাউকে খেতে দেখলেও আনন্দে চোঁখে পানি এসে যায়
এত সামান্যতেই কারো কারো সব চাহিদা মিটে যায়, আর আমরা এত কিছুর পরেও কেবল খাই খাই করি

খাওয়াদাওয়া শেষে আমরা যখন বেরিয়ে আসি আমি ভাবছিলাম পকেটে আর কিছু টাকা থাকলে তাকে একজোড়া স্যান্ডেল আর শীতের জামা কিনে দেয়া যেত
দোকান থেকে বেড়িয়ে ফুটপাথে এক শীতের কাপড় বিক্রেতা নূর নবীকে একটি নতুন জ্যাকেট পড়িয়ে দিয়ে আমাকে বলে, ভাই আমি গরীব মানুষ, করতে অনেক কিছুই মন চায় কিন্তু আল্লাহ সেই সামর্থ্য এখনো দেয় নাই আপনারে এই পোলারে নিয়া খাইতে দেইখা অনেক ভালা লাগছে ভাই
আমি মন থেকে সেই দোকানি ভাইয়ের জন্য দোয়া করি, ভাই আল্লাহ আপনাকে আপনার মনের সমান বড় সামর্থ নিশ্চই দিবেন,কেননা তিনি সবই দেখেন এবং জানেন

আমার সময় একটা জায়গায় থমকে আছে,
সেটি হলো নূর নবীর চলে যাওয়া
শহীদ আনোয়ার কলেজ গেটে তার বড় বোন আর ছোট ভাই আছে বলায় আমি তাদের জন্য রুটি সবজি প্যাকেট করে ওর হাতে দিই ছোট একটা মানুষ, প্যাকেট হাতে নিয়ে ছোট ভাই আর বড় বোনের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছে, তার হেঁটে যাওয়ার মাঝে অভিভাবকত্ব সূলভ একটা চলন ছিলো, ছিলো রাতে খাবার নিশ্চয়তা
আমার বারবার আফসোস হচ্ছে সংগে তাকা না থাকায় ওদের জন্য শীতের আর কিছু কিনে দিতে পারলাম না বলে বাচ্চাটা খালি পায়ে হাঁটছিলো, একজোড়া স্যান্ডেলও কিনে দেয়া হলো না

ছবিটা দেখে কেউ যদি চিনতে পারেন, প্লিজ আমাকে ইনবক্সে ঠিকানাটা জানাবেন, অনেক কিছু করতে না পারলেও অল্প কিছু করতে পারলেও নিজের ভালো লাগবে
বলেছিলো ওর বাসা ভাষানটেকের ওদিকে

(ছবিটাও নূরনবীর অনুরোধে তুলেছিলাম, আমার হাতে মোবাইল দেখে বলেছিলো, আমার কোন ছবি নাই, কেউ আমার ছবি তুলে না
এটি নূর নবীর জীবনের প্রথম ছবি, হয়তো আমার সাথে তার আরো ছবি হবে হয়তো হবে না কিন্তু এই ছবির সাথে অন্য কোন ছবির তুলনা কি চলে?)

Towfik Mithun
(20/12/2015)


 
»» read more