Saturday, January 21, 2017

"অজ্ঞাতনামা - The Unnamed

অসাধারণ একটা সিনেমা দেখলাম!
বাংলা সিনেমা।
জনপ্রিয় অভিনেতা, লেখক ও নির্মাতা তৌকির আহমেদ নির্মিত "অজ্ঞাতনামা - The Unnamed"
অসম্ভব হৃদয়স্পর্শী ও গুরুপ্তপূর্ন একটা বিষয়ের প্রেক্ষাপটে সিনেমাটি নির্মিত। আদম পাচারকারী চক্রের নানা প্রলোভনে ফেঁসে সহজ সরল বাঙ্গালী তরুন বা যুবকটি এক বুক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশের মাটিতে পাড়িহয়তো দেয় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নিজ পরিচয় গোপন করেই বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়।
নিজ পরিচয় লুকাতে গিয়ে এক একজন হয়ে উঠে অজ্ঞাতনামা।
ছবির গুরু গম্ভীর করুন সাবজেক্টকে নির্মাতা ভিন্ন স্বাদের একটা গল্পের মাধ্যমে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

ছবির চিত্রনাট্য অসম্ভব রকম গোছানো এবং যথেষ্ট গতিময়। বোর হওয়ার এতোটুকু সূযোগ নেই। আর সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে প্রতিটা চরিত্র পরিস্থিতির সাথে খুব সুন্দর ভাবে মিশে গেছে। এতোগুলো চরিত্রকে এমন চমৎকার ভাবে গল্পে মিশিয়ে দেয়া বাংলা চলচ্চিত্রে খুব একটা দেখা মেলে না। চিত্রনাট্যের দিক থেকে ছবিটি নিঃসন্দেহে বছরের সেরা চিত্রনাট্যে ছবি।

ছবিটিতে জাঁদরেল সব অভিনেতাদের পাওয়া গেছে। 
ফজলুর রহমান বাবু  প্রতিনিয়ত অভিনয়ের এক এক নতুন স্ট্যান্ডার্ড দাড় করিয়ে যাচ্ছেন। এ ছবিতে তার অভিনয় নিঃসন্দেহে আমার দেখা সেরা অভিনয় গুলোর একটি। পুত্রশোকে হতবিহবল পিতার চরিত্রে বাবুর শোকে পাথর চোখের স্থির দৃষ্টি এক কথায় অনবদ্য। তার সরল মুখের এক্সপ্রেশনগুলো রীতিমত বিস্ময়কর। বাবু ভাই শুধুমাত্র এ ছবির জন্যই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুষ্কারের দাবী রাখেন।
শহীদুজ্জামান সেলিম  দালাল চরিত্রে দারুন দেখিয়েছেন। মোশাররফ করীমের কমেডিগুলোও দেখার মত ছিলো । সেলিম-করিম কেমিস্ট্রি এককথায় অদ্ভুত উপভোগ্য ছিলো!
শতাব্দী ওয়াদুদ  পুলিশ চরিত্রে আমার দেখা সেরা অভিনেতা। সমসাময়িক পুলিশ চরিত্রে তার বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। বিদেশে যেতে মরিয়া বিধবা চরিত্রে (নিপুন) নিজেকে উপস্থাপণ করেছেন দারুণ। শুধুমাত্র অভিনয়ের কারনেও এ ছবি প্রশংসা দাবী করে।

সিনেমাটোগ্রাফী ছিলো সুন্দর এবং মানানসই। বাংলাদেশের প্রকৃতি ছবিতে স্নিগ্ধ, সরল হয়েই ধরা দিয়েছে। অসাধারণ লোকেশান সিলেকশান, রাতের ঝুম বৃষ্টিতে নদীতে নৌকা; এ যেন এক অন্য রকম সৌন্দর্য্য। গ্রাম, কাঁচা বা পাকা রাস্তা, ফসলী জমি, নদী; বাংলার গ্রামের দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয়।
'অজ্ঞাতনামা' বিষয় বস্তুর দিক থেকে যেমন ব্যাতিক্রমধর্মী, তেমনি নির্মান ও অভিনয় গুনে চমৎকার একটি ছবি।

সঠিক পৃষ্ঠপোষোকতার অভাবে বাংলাদেশে এ ধরনের ছবি সবসময় নির্মিত হয়না।
আমার ধারণা আধুনিক বাণিজ্যিকীকরণের অভাবে এই ছবি হলে খুব বেশী সাড়া ফেলতে পারেনি।
'আয়নাবাজী'র মত বাণিজ্যিক প্লান গ্রহণ করলে এই ছবি শুধু ঝড় না ;সাইক্লোন সৃষ্টি করতো।
কথায় বলে প্রচারেই প্রসার।

আলতু ফালতু এনার্জী লাইটও কোম্পানীর প্রচারের কথা বলে মানুষকে গছিয়ে দেয়া যায় আর এটাতো দূর্দান্ত একটা সিনেমা।
আশা করবো তৌকির আহমেদের এমন চমৎকার সিনেমা নির্মান অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতের মার্কেটিং পলিসিতে একটু পরিবর্তন এনে দেশের সর্বত্র সিনেমা পৌছে দেয়ার ব্যাবস্থা করবেন যাতে মানুষ হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সুযোগ পায়।

তৌকির ভাই, মানসম্মত সিনেমা পেলে আমরা কিন্তু হলে গিয়েও সিনেমা দেখি। প্রমান আপনার সামনেই আছে।
অগ্রীম শুভ কামনা ।

লেখাঃ তৌফিক মিথুন
(কিছু তথ্য ও ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

No comments:

Post a Comment