এখন পর্যন্ত আমার তোলা শ্রেষ্ঠ সেলফী এটি।
জ্বী ঠিকই বলেছি, এযাবৎ তোলা সেলফী গুলোর মধ্যে এটিকেই আমি আলাদা করতে পারি নিশ্চিন্তে।
আমার পাশে যাকে দেখছেন, এই শিশুটির নাম নূর নবী। সে একজন পথশিশু। বয়স খুব বেশি হলে ৪ বছর, কথাও গুছিয়ে বলতে পারেনা।
আজ সন্ধায় অফিস থেকে ফেরার সময় শহীদ আনোয়ার কলেজের সামনে থেকে আমার পিছু নেয়, ছোট ছোট পায়ে হেঁটে কি আর আমার সাথে পারে!
তার দৌড়ে আসা দেখে আমি আমার হাঁটার গতি কমাই। আমাকে বলে ক্ষিদা লাগছে কিছু খাওয়ান।
আমি তাকে ৫টাকার একটা কয়েন দিলে সে বলে, 'পয়সা লাগব না, কিছু খামু'
-কি খাবা?
সে বলল,সবজি দিয়ে রুটি।
নিতান্তই সাদামাটা খাবার। কিন্তু যারা সৈনিক ক্লাব হতে কচুক্ষেত আসা যাওয়া করেন তারাই জানেন এটি ক্যান্টনমেন্ট এর সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় দোকানপাট মাঝ পথে নেই।
আমি তাকে বললাম এইখানে তো দোকান নাই রে।
সে দূরে হাত দেখিয়ে (কচুক্ষেত বাজার) বলল ঐযে ঐখানে একটা দোকান আছে রুটি বেঁচে কিন্তু আমারে ঢুকতে দেয়না।
-ঐখানে খাইতে মন চায়?
নূর নবী মাথা নাড়ে।
আমি তাকে নিয়ে ঐদিকে হাঁটা দিলাম।
সে আমাকে তাকে দেয়া ৫টাকার কয়েনটা ফেরত দিয়ে বলে আমারেতো খাওয়াইতেই নিতাছেন, পয়সা দিয়া আর কি করুম?
আমি পয়সাটা না নিয়ে যখন পরে কিছু কিনে খাবার জন্য রেখে দিতে বললাম, সে অনেক অবাক আর খুশী হয়ে নিজের ছেঁড়া জামার পকেটে গুজে নিলো।
দোকানের সামনে গিয়ে ভেতরে ঢুকতেও দ্বীধাবোধ করছে। আমি সাহস দিয়ে ভেতরে নিয়ে চেয়ারে বসাতে চাইলেও ম্যানেজারের দিয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায়। তাকে তার চাহিদা মত রুটি-সবজী দেয়ার পরেও ছোট ছোট হাতে ঠিকমত খেতে না পারায় আমি যখন খাইয়ে দিচ্ছিলাম, আশেপাশের সব লোকজন মনে হলো আমাদের দেখে সার্কাসের মজা নিচ্ছিল। এই সব লোকেরা নিজেরা কিছু পারেনা, অন্যদের নিয়ে খালি বাজে মন্তব্য করতে পারে। আমাকে নিয়েও অনেক বাজে মন্তব্য করছিল তারা।
যাই হোক, খাওয়া শেষে পাশের টেবিলে একজনকে চা খেতে দেখে নূর নবীর অপলক মায়াভরা চোঁখ ঐদিকে তাকিয়ে থাকে। আমি ওর জন্য চা অর্ডার করাতে তার যে কি খুশি!
তৃপ্তি সহকারে ক্ষুধার্ত কাউকে খেতে দেখলেও আনন্দে চোঁখে পানি এসে যায়।
এত সামান্যতেই কারো কারো সব চাহিদা মিটে যায়, আর আমরা এত কিছুর পরেও কেবল খাই খাই করি।
খাওয়াদাওয়া শেষে আমরা যখন বেরিয়ে আসি আমি ভাবছিলাম পকেটে আর কিছু টাকা থাকলে তাকে একজোড়া স্যান্ডেল আর শীতের জামা কিনে দেয়া যেত।
দোকান থেকে বেড়িয়ে ফুটপাথে এক শীতের কাপড় বিক্রেতা নূর নবীকে একটি নতুন জ্যাকেট পড়িয়ে দিয়ে আমাকে বলে, ভাই আমি গরীব মানুষ, করতে অনেক কিছুই মন চায় কিন্তু আল্লাহ সেই সামর্থ্য এখনো দেয় নাই। আপনারে এই পোলারে নিয়া খাইতে দেইখা অনেক ভালা লাগছে ভাই।
আমি মন থেকে সেই দোকানি ভাইয়ের জন্য দোয়া করি, ভাই আল্লাহ আপনাকে আপনার মনের সমান বড় সামর্থ নিশ্চই দিবেন,কেননা তিনি সবই দেখেন এবং জানেন।
আমার সময় একটা জায়গায় থমকে আছে,
সেটি হলো নূর নবীর চলে যাওয়া।
শহীদ আনোয়ার কলেজ গেটে তার বড় বোন আর ছোট ভাই আছে বলায় আমি তাদের জন্য রুটি সবজি প্যাকেট করে ওর হাতে দিই। ছোট একটা মানুষ, প্যাকেট হাতে নিয়ে ছোট ভাই আর বড় বোনের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছে, তার হেঁটে যাওয়ার মাঝে অভিভাবকত্ব সূলভ একটা চলন ছিলো, ছিলো রাতে খাবার নিশ্চয়তা।
আমার বারবার আফসোস হচ্ছে সংগে তাকা না থাকায় ওদের জন্য শীতের আর কিছু কিনে দিতে পারলাম না বলে। বাচ্চাটা খালি পায়ে হাঁটছিলো, একজোড়া স্যান্ডেলও কিনে দেয়া হলো না।
ছবিটা দেখে কেউ যদি চিনতে পারেন, প্লিজ আমাকে ইনবক্সে ঠিকানাটা জানাবেন, অনেক কিছু করতে না পারলেও অল্প কিছু করতে পারলেও নিজের ভালো লাগবে।
ও বলেছিলো ওর বাসা ভাষানটেকের ওদিকে।
(ছবিটাও নূরনবীর অনুরোধে তুলেছিলাম, আমার হাতে মোবাইল দেখে বলেছিলো, আমার কোন ছবি নাই, কেউ আমার ছবি তুলে না।
এটি নূর নবীর জীবনের প্রথম ছবি, হয়তো আমার সাথে তার আরো ছবি হবে হয়তো হবে না কিন্তু এই ছবির সাথে অন্য কোন ছবির তুলনা কি চলে?)
Towfik Mithun
(20/12/2015)
No comments:
Post a Comment